Updated on April 30th, 2022 at 11:27 am(BST)

ঈদে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পর্যটন খাত

মহামারির মধ্যে দুই বছরের মন্দার পর ঈদের ছুটিতে পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন ঈদে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে চলমান মন্দা কাটানোর আশা করছেন তারা। টু্যর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) নেতারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ২০২০ এবং ২০২১ সালে কোভিডের কারণে এই ধরনের ভ্রমণের উলেস্নখযোগ্যভাবে ধাক্কা লাগে। এরই মধ্যে ছুটির মধ্যে পর্যটকদের ব্যাপক চাহিদার কারণে বিমানের টিকিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশের তিনটি এয়ারলাইন্স-বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারের কর্মকর্তারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে জনপ্রিয় দুটি পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও সিলেটে টিকিটের চাহিদা অনেক বেশি। তবে বেড়েছে ভাড়ার পরিমাণও। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা-কক্সবাজার ফ্লাইটের প্রায় ৮০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন তাদের মুখপাত্র কামরুল ইসলাম। হোটেল-মোটেল মালিকরা জানান, রমজানের শুরু থেকেই কক্সবাজার ছিল পর্যটকশূন্য। হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলোর বুকিংও শূন্য। একই সঙ্গে সব ধরনের খাবার হোটেলে ক্রেতা না থাকায় বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। তারা মনে করছেন, আগামী ঈদে প্রত্যাশার বাইরে পর্যটক সমাগম ঘটবে। তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজের সংখ্যা ৫১৬টি। এসব হোটেলে ধারণ ক্ষমতা প্রায় তিন লাখ পর্যটকের। এ এলাকায় অগ্রিম বুকিং শুরু হওয়ায় খুশি তারা। হোটেল মালিক কলিম উলস্নাহ বলেন, করোনা বড় ধরনের লোকসানে ফেলেছে ব্যবসায়ীদের। পর্যটন শিল্প ধরে রাখতে হলে পর্যটকদের গুরুত্ব দিতে হবে।

এদিকে কুয়াকাটা টু্যরিজম ম্যানেজমেন্টের নাসির উদ্দিন জানান, গত দিনগুলোতে পহেলা বৈশাখে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ রুম বুকিং থাকত। তবে এ বছর সেই চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। তিনি আশা করছেন ঈদে সেই খরা থাকবে না। টোয়াবের সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, বর্তমানে ৪০ লাখ লোক পর্যটন খাতে কর্মরত রয়েছে। বাংলাদেশ আউটবাউন্ড টু্যর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ বলেন, ছুটিতে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ দেশের বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ভারতেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক দেশটিতে ঘুরতে যাবেন। ইউএস-বাংলার কামরুল বলেন, বেশিরভাগ টিকিট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকা-কলকাতা টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া এবং দুবাইয়ের ফ্লাইটের টিকিটেরও চাহিদা বেশি। টোয়াবের সাবেক পরিচালক তসলিম আমিন বলেন, ঈদের তিন দিনের জন্য ঢাকা ও আশপাশের সব রিসোর্ট সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। এবং কক্সবাজার ও সিলেটের ভালো হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের রুমগুলো ঈদের পর এক সপ্তাহের জন্য বুক করা হয়েছে। ৫ মে থেকে এক সপ্তাহ রাঙামাটি ও বান্দরবানে প্রায় একই অবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি। রাঙামাটির অরুন্নক হলিডে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক হিমেল জানান, তাদের ১১টি কটেজের সবকটিই ৩ মে থেকে ৯ মে পর্যন্ত বুকিং নেয়া হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদা বেশি থাকায় ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-বরিশাল রুটে টিকিটের দাম বেড়েছে। ইউএস-বাংলার কামরুল বলেন, এক-দুই মাস আগে যারা টিকিট কিনেছেন, তারা নিয়মিত দাম পেয়েছেন। নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেসবাহ উল ইসলাম বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় টিকিটের দাম বেড়েছে। এভিয়েশন সেক্টরে চাহিদা বেশি হলে টিকিটের দাম বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। গত দেড় বছরে দেশে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ায় ফ্লাইটের টিকিটের দামও বেড়ে গেছে। জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। ওই মাসে প্রতি লিটারের দাম ছিল ৪৬ টাকা। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল লিটারে ১৩ টাকা বেড়ে দাম পৌঁছেছে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ, ১৮ মাসের ব্যবধানে দেশে জেট ফুয়েলের দাম ৫৪ টাকা বা ১১৭ শতাংশ বেড়েছে। বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, “এখন না হয় যুদ্ধের কারণে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে। কিন্তু দেশে গত ১৮ মাস ধরে ননস্টপ জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে। কোভিড মহামারির সময় যখন সব কিছু বন্ধ, তখনও জেট ফুয়েলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হয়েছে। কোভিডের ধকল কাটিয়ে ওঠার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার যখন এভিয়েশন খাতে ভর্তুকি দিয়ে গেছে, তখনও দেশে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন কামরুল।

তিনি বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী ধকল কাটিয়ে এভিয়েশন খাতটা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পেয়েছে। এ সময় এই খাতের পাশে থাকতে হবে। না হলে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা পেরে উঠব না। দেখা যাবে দিন শেষে বাজারটা রয়ে গেছে, কিন্তু সেটা চলে যাবে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে।’ এভিয়েশন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কোভিডের আগেও ঢাকা থেকে যশোরের ভাড়া ছিল ৩ হাজার টাকার আশপাশে। তিন হাজার টাকায় ঢাকা- সৈয়দপুর টিকিটও পাওয়া যেত। কিন্তু এখন চার হাজারের নিচে কোনো গন্তব্যের টিকিট নেই ইউএস বাংলায়। দাম বাড়িয়েছে বেসরকারি আরেক এয়ারলাইন্স নভো এয়ারও। এ মাসেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর ও কক্সবাজার রুটে প্রতি টিকিটে ৫০০ টাকা করে এবং যশোর ও বরিশাল রুটে প্রতি টিকিটে ৩০০ টাকা করে বাড়িয়েছে এ এয়ারলাইন্স। সম্প্রতি বিআইডিএসের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের পর্যটন খাতে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার মানুষ। মোট ক্ষতির মধ্যে পরিবহণে ৪০ শতাংশ, হোটেলে ২৯ শতাংশ এবং রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁয় ক্ষতি ২৫ শতাংশ। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) পুরো খাতে বিক্রয় ও আয় উলেস্নখযোগ্যভাবে কমেছে। এই পতন হোটেল ও রিসোর্টগুলোর জন্য প্রায় ৮৪ শতাংশ এবং টু্যর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট ও বিনোদন পার্কের জন্য ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশ। প্রাক-মহামারি বছরের তুলনায় মহামারি বছরে হোটেল ও রিসোর্টে নিয়োগ করা কর্মীর গড় সংখ্যা ৪২ শতাংশ কম ছিল। কিন্তু কর্মী ছাঁটাই ৩১৭ শতাংশ বেশি ছিল। বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ পর্যটন খাতে নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এক নয়। তারপরও পর্যটন খাত প্রবৃদ্ধিতে অনেক অবদান রাখে। করোনা সংকটে অন্যান্য খাতকে টেনে তুলতে সরকার যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে, সেভাবে পর্যটন খাতে দেখিনি। তাহলে এই খাতে এত ক্ষতি হতো না। এমনকি এতসংখ্যক মানুষ কাজও হারাত না। সুতরাং পর্যটন খাতেও সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। ‘

Total views 222

মূল প্রকাশকের সংবাদটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন Click Here.  উপরের সংবাদ এবং ছবিটি থেকে সংগ্রহীত এবং এই সংবাদটির মূল প্রকাশক কর্তিক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই সংবাদটি কোন প্রকার সংশোধন পরিবর্তন অথবা পরিবর্ধন ছাড়া অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত। প্রকাশক কর্তিক যে কোনো আপত্তি webbangladeshgroup@ gmail.com গ্রহণ করা হয়। এই সংবাদে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্য বা মতবাদ এর সাথে ওয়েব বাংলাদেশ এর কোন সম্পর্ক নাই এবং কোন প্রকার দায় ভার গ্রহণ করে না।