
চলতি মাসে প্রবাসী আয় আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে। এ মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪ কোটি ডলারেও কম। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বরে আগের মাসের চেয়েও কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স। আগের মাস আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, যা তার আগের ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার জন্য হুন্ডিপ্রবণতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এখন হুন্ডিতে অর্থ পাঠালেই বেশি রেট মিলছে, প্রায় ১১৮ থেকে ১২০ টাকা। আর ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠালে মিলছে সর্বোচ্চ ১০৯.৫০ টাকা।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত বছরের জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী এতদিন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ১০২ টাকা পেতেন। এখন পাচ্ছেন ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া গত বছরের ২৩ মে যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী এখন ৫ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা।
অন্যদিকে গত দেড় বছরে রেকর্ডসংখ্যক কর্মী কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন। তার পরও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আশানুরূপ বাড়ছে না। এর মূল কারণ ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামে এখন বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ১০ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় কম এবং যারা অবৈধ, তারা হুন্ডিতেই টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, কোরবানির ঈদের মাস জুনে প্র্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠান ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এটি ছিল গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে। তখনো কোরবানির ঈদের আগেই রেমিট্যান্সে এমন ঢল নেমেছিল। তবে চলতি অর্থবছরের এসে রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও ধীরগতি এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এটি আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম ছিল। আর আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ নেমে আসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে। এটি আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে সাড়ে ২১ শতাংশ কম। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স আসে ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স আসে ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার।
অন্যদিকে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৭৩ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসে ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। আর ৮ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসেছে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ৭ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরেও প্রবাসী আয়ে গতি খুব একটা ভালো ছিল না। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২ হাজার ১৬১ কোটি (২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) কোটি ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের গতি ছিল আরও নিম্নমুখী। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম ছিল। অথচ করোনার মধ্যেই ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় রেকর্ড হয়েছিল। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা প্রায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, যা কোনো এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি ছিল।
মূল প্রকাশকের সংবাদটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন Click Here.
উপরের সংবাদ এবং ছবিটি থেকে সংগ্রহীত এবং এই সংবাদটির মূল প্রকাশক কর্তিক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই সংবাদটি কোন প্রকার সংশোধন পরিবর্তন অথবা পরিবর্ধন ছাড়া
অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত। প্রকাশক কর্তিক যে কোনো আপত্তি webbangladeshgroup@ gmail.com গ্রহণ করা হয়। এই সংবাদে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্য বা মতবাদ এর সাথে ওয়েব বাংলাদেশ এর কোন সম্পর্ক নাই এবং কোন প্রকার দায় ভার গ্রহণ করে না।