
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পতন দাবিতে চলমান বিক্ষোভে গতকাল রোববার পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন অনেকে। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। হতাহতের ঘটনার পর সেনাবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। ফলে ব্যাপক মাত্রায় দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে জান্তা সরকার। দাঙ্গা পুলিশের পাশাপাশি গতকাল থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র সেনা-পুলিশ ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়, দাউই, মায়িক, বাগো, পোকোক্কুসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে। এসব এলাকার রাজপথে দেখা গেছে ছোপ ছোপ রক্তের চিহ্ন। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি চালানো হয়েছে। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতার নিন্দা করছি এবং সেনাবাহিনীকে দ্রুত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, রোববার মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে। তারা সরাসরি গুলি চালিয়েছে। আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে তথ্য এসেছে, এসব হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অহিংস বিক্ষোভে এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ অগ্রহণযোগ্য।
গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ শীর্ষ রাজনীতিকদের আটক ও গৃহবন্দি করে। এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন সেনাপ্রধান মিন অং হদ্মাইং। তবে তার এ প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সু চিসহ গণতান্ত্রিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনে ক্রমেই চড়াও হচ্ছে জান্তা সরকার। এ পর্যন্ত সহস্রাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
চিকিৎসক, রাজনীতিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ৃব্দত করে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গতকালের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ধরাধরি করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে; তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তাক্ত।
‘মিয়ানমার নাও’ নামে একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, বিক্ষোভকারীরা কীভাবে রক্তাক্ত হয়েছেন, তা পরিস্কার নয়। তবে লোকজনকে ‘গুলি করা’ হচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছে না। ইয়াঙ্গুনের স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের দমনে ব্যর্থ হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমে এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
রোববার ইয়াঙ্গুনে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। তখন সেখানে তিন নিউ ই নামে একজন নারী শিক্ষক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে ওই নারীর মেয়ে ও তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন।
পুলিশ ইয়াঙ্গুনে মেডিকেল কলেজের সামনেও চলমান বিক্ষোভে স্টান গ্রেনেড ছোড়ে। এতে সাদা অ্যাপ্রোন পরা চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এর পর সেখান থেকে ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাউইয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করেছে পুলিশ। এতে তিনজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। এ ছাড়া মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভ চলাকালে দু’জন নিহত হয়েছেন। বিকেলে নিরাপত্তা বাহিনী আবার গুলি করলে এক নারী নিহত, বেশ কয়েকজন আহত হন।
রয়টার্স জানায়, বিক্ষোভে গুলি করার বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য পুলিশ ও ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তাতে সাড়া পাওয়া যায়নি।
নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) ব্যাপক জয়ে স্বীকৃতি না দিয়ে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ক্ষমতা দখল করে। তবে এর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা বিক্ষোভ বিষয়ে জেনারেল মিন অং হদ্মাইং বলেছেন, প্রতিবাদ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে এবং পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহারের মতো নূ্যনতম শক্তি প্রয়োগ করছে।
তবে বিক্ষোভে গুলিতে নিহতের সংখ্যা তার এ বক্তব্যের উল্টো চিত্রই সামনে আনছে। ক্রমেই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিস্কার :জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মো তুনকে গত শনিবার বহিস্কার করেছে দেশটির জান্তা সরকার। নিজ দেশে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ ছেড়ে তাদের বিরুদ্ধে ‘যথাসম্ভব সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ’ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর পর বহিস্কার করা হলো তাকে।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবেগঘন বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত মো তুন। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের নিজ দেশের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা বিরল। তবে মো তুন সেই কাজই করেছেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখব। এই সরকার জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার ও জনগণের স্বার্থে পরিচালিত সরকার।
মূল প্রকাশকের সংবাদটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন Click Here.
উপরের সংবাদ এবং ছবিটি থেকে সংগ্রহীত এবং এই সংবাদটির মূল প্রকাশক কর্তিক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই সংবাদটি কোন প্রকার সংশোধন পরিবর্তন অথবা পরিবর্ধন ছাড়া
অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত। প্রকাশক কর্তিক যে কোনো আপত্তি webbangladeshgroup@ gmail.com গ্রহণ করা হয়। এই সংবাদে প্রকাশিত সংবাদ, তথ্য বা মতবাদ এর সাথে ওয়েব বাংলাদেশ এর কোন সম্পর্ক নাই এবং কোন প্রকার দায় ভার গ্রহণ করে না।